সকলে পড়ুন ও শেয়ার করুন

খোশ আমদেদ মাহে রমজান। শাবান মাসের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে একফালি বাঁকা চাঁদ উদিত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের দ্বারে ফিরে আসে মহিমান্বিত মাস রমজান। এটি আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস, কোরআনের ভাষায় যাকে ‘রামাদান’ বলা হয়েছে। মূল শব্দ র-ম-দ গ্রীষ্ম ঋতুর উত্তাপের প্রতি ইঙ্গিত করে এবং এভাবে দেখায় যে প্রাচীন আরবরা যখন নিবেদিত মাসগুলোর দ্বারা সৌর বছরের সঙ্গে তাদের বছরের সামঞ্জস্য বিধান করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, তখন কোনো এক ঋতুর সঙ্গে নামটি জড়িত ছিল।
রমজানই একমাত্র মাস, যার নাম উল্লেখ করে কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, শাহ্ রামাদানাল্লাজি উনজিলা ফি-হিল কোরআন…(সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)। ‘রামাদান’ আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম। রাসুলে করিম ﷺ একে উম্মতের মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। রহমত, বরকত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে এটি ধনী-গরিব, ছোট-বড়, আরব-অনারব সবার কাছে ফিরে আসে। এ মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিন মুসলমানরা তাদের ইমানি চেতনা জাগ্রত করে এবং আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নিবেদিত বান্দা হওয়ার মহান সুযোগ লাভ করে।
ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন সাওম, যা চাঁদ দেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ ﷺ বলেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ইফতার (রোজার সমাপ্তি) করো। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে শাবান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ করো। (বোখারি, মুসলিম, কিতাবুস সাওম)। রাসুলে করিম ﷺ শাবান মাসের তারিখগুলো ভালো করে স্মরণ রাখতেন, যা অন্য কোনো মাসে দেখা যেত না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তিনি শাবান মাস ৩০ দিন গণনা করতেন, তারপর রোজা রাখতেন (আবু দাউদ : সাওম অধ্যায়)।
ইসলামের রোকনগুলোর মধ্যে রমজান ও হজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং প্রতিটির মৌসুম হচ্ছে তিন মাস। রজব, শাবান আর রমজান- এ তিন মাস হলো সিয়ামের মৌসুম। শাওয়াল, জিলক্বদ ও জিলহজ- এ তিন মাস হলো হজের মৌসুম। রমজানের প্রস্তুতির দুই মাস এবং হজের প্রস্তুতির দুই মাসসহ ছয় মাস কেটে যায় শুধু এ দুই ইবাদতকে কেন্দ্র করে। এই বিশেষ দুটি ইবাদতের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলামী সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতার নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে বলে রোজা ও হজ মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের প্রতীক। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ ﷺ হচ্ছেন নবীদের সর্দার, কোরআন হচ্ছে আসমানি কিতাবগুলোর সর্দার, উম্মতে মুহাম্মদি হচ্ছে অন্যান্য উম্মতের সর্দার; আর রমজান হচ্ছে অন্যান্য মাসের সর্দার। কোরআন হচ্ছে রাহমাতুলি্লল মুমিনিন আর নবী মুহাম্মদ ﷺ হচ্ছেন রাহমাতুলি্লল আলামিন।
রমজানের আগমন থেকে শাওয়ালের চাঁদ উদিত হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মুহূর্ত রহমত ও বরকতমণ্ডিত। ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহ আলাইহি তাঁর ‘এহয়াউল উলূম’ কিতাবে রহমতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘রোজাদার বান্দা যখন নিদ্রা যায়, তখন তার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের বদৌলতে আল্লাহ তাসবিহর বদলা দান করেন।’ এ ছাড়া সেহরি, ইফতার, তারাবি, নামাজ, তিলাওয়াতে কোরআন, তাসবিহ-তাহলিল এবং অপরাপর ইবাদত-বন্দেগিতেও সওয়াব অন্য মাসের চেয়ে ৭০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এভাবে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয় বলে এ মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়। রাসুলে পাক ﷺ বলেছেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা বলো না রমজান এসেছে, বরং বলো ‘মাহে রমজান’ এসেছে।’ কোরআন মজিদে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, অবশ্যই তাতে রোজা রাখবে।’ সিয়াম সাধনার দ্বারা বান্দার পাপরাশি মুছে যায়। রোজা শিক্ষা দেয় কিভাবে আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযমী ও সহানুভূতিশীল হওয়া যায়। ধৈর্য ধরে বিপদ মোকাবিলা করার সবকও পাওয়া যায় সিয়াম সাধনায়। গরিব, অনাথ ও দুস্থদের নিত্যদিনের মর্মবেদনা উপলব্ধির মাধ্যমে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও খোদাভিরুতা অর্জন করা যায়। খোদাভিরুদের জন্যই আল্লাহ ঘোষণা করেন : ‘রোজা আমার জন্যই, আমিই এর প্রতিদান।’
রমজান মুমিন মুসলমানের কাছে মেহমানস্বরূপ আগমন করে। মেহমানের প্রতি ইজ্জত ও তাজিম একটি জরুরি বিষয়। রমজানের সম্মান মানে শুধু পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকা নয়; বরং যাবতীয় পাপকর্ম, নীতিবহির্ভূত ও গর্হিত কাজ থেকেও বিরত থাকার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। রাসুল ﷺ বলেছেন, ‘যে মিথ্যা কথা ও মিথ্যার আমল পরিত্যাগ করতে পারল না, তার খাদ্য ও পানীয় ত্যাগের কোনো মূল্য নেই। কাজেই এ মাসের যথাযথ ইজ্জত ও সম্মান প্রদর্শনই কেবল আমাদের ইহকাল ও পরকালের মুক্তির পথ দেখাতে পারে। ইনশাহআল্লাহ
Comments